![]() |
তাজমহল |
পৃথিবীর অন্যতম সেরা এই দর্শনীয় স্থান যারা দেখেছেন, তারা কেউ দ্বিমত পোষণ করবেন বলে মনে হয় না। মুঘল সম্রাট শাহজাহান কর্তৃক নির্মিত এই অনন্য স্মৃতিসৌধ সম্রাটের প্রিয়তমা স্ত্রী সম্রাজ্ঞী মমতাজ মহলের প্রতি ভালবাসার প্রতীক হয়ে জ্বলজ্বল করছে। শাহজাহান ও মমতাজ মহল-এর মধ্যে ভালবাসা এত গভীর ছিল যে, রাজকার্য থেকে শুরু করে সামরিক অভিযান পর্যন্ত মমতাজ ছিলেন তার স্বামীর অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী।
সর্বশেষ সন্তান জন্মলাভের সময় ১৬৩০ সালে বোরহানপুরে মমতাজ মহলের মৃত্যু হয়। প্রিয়তমা স্ত্রীর ভালোবাসার স্মৃতিকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে যমুনা নদীর তীরে আগ্রায় ১৬৩১ সালে শাহজাহানের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে তাজমহলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০ হাজার লোকের ২২ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে ১৬৫৩ সালে তাজমহলের নির্মাণকাজ শেষ হয়। নির্মাণে খরচ হয়েছিল প্রায় ৩২ মিলিয়ন রুপি, যার বর্তমান মূল্য ৪০ লাখ পাউন্ড।
দিল্লি, কান্দাহার, লাহোর এবং মুলতানের সুদক্ষ রাজমিস্ত্রি এবং বাগদাদ, শিরাজ এবং বোখারার অনেক দক্ষ মুসলিম নির্মাতা তাজের নির্মাণকাজে অংশ নিয়েছিলেন। নির্মাণকাজে ১০০০ এরও বেশি হাতি ব্যবহার করা হয়েছিল। তাজের প্রধান স্থপতি ছিলেন সেই সময়ের প্রখ্যাত মুসলিম স্থপতি ওস্তাদ ঈসা খাঁ।
তাজমহলের ভেতরে ঢোকার পর কিছুদূর যেতেই এক প্রবেশপথের সামনে পায়ে বাঁধার জন্য সাদা ধবধবে নরম এক রকম কাপড় দেওয়া হয় জুতাসহ পায়ে পড়বার জন্য। হাঁটতে গিয়ে মহা মূল্যবান পাথর এবং কারুকার্য যেন পায়ের চাপে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, সেজন্য এ ব্যবস্থা। এ চমৎকার সমাধিসৌধ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়েছে। গেট পেরিয়ে তাজমহলের মূল সৌধের কাছে যেতে বেশকিছু পথ হাঁটতে হয়। নিচ থেকে ২১টি সিঁড়ি পার হয়ে তাজমহলের মূল বেদীতে প্রবেশ করতে হয়। শাহজাহানকে তার প্রিয়তমা স্ত্রী মমতাজ মহলের পাশেই সমাধিস্থ করা হয়। দুটি কবরই রয়েছে তাজমহলের যে গম্বুজ, ঠিক তার নিচে।
কথিত আছে, পৃথিবীতে যাতে দ্বিতীয় কোন তাজমহল গড়ে না ওঠে সেজন্য সম্রাট শাহজাহান কারিগরদের হাতের আঙুল কেটে দিয়েছিলেন এবং তাদের অন্ধ করে দিয়েছিলেন। তীব্র ভালোবাসা মাঝে মানুষকে অন্ধও করে ফেলে!
কখন যাবেনঃ তাজমহল বেড়াতে আগ্রা যাওয়ার উপযুক্ত সময় নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি। খুব গরমে আগ্রা না যাওয়াই ভালো।
কীভাবে যাবেনঃ দিল্লী থেকে ট্রেনে ২১০ কিলোমিটার দূরে আগ্রায় যেতে দেড় ঘণ্টা লাগে। ঢাকা থেকে কলকাতা হয়ে রাজধানী এক্সপ্রেসে করে দিল্লী যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেনঃ এখানে বিভিন্ন মানের এবং দামের হোটেল আছে। পছন্দমতো হোটেল বুক করে নিন। এখানে আগ্রার বিখ্যাত মোগলাই খাবার, বিরিয়ানি খেতে পারবেন।
তবে আর দেরী কেন? চলে আসুন প্রেমের সৌধ তাজ দেখতে, মুগ্ধ বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে থাকা কিছু স্মৃতি জড়ো হোক আপনার সংগ্রহে!