Saturday, March 27, 2021

চলুন ঘুরে আসি আগ্রার তাজমহল (তাজমহলের পরিচিতি)

 

তাজমহল
তাজমহল

পৃথিবীর অন্যতম সেরা এই দর্শনীয় স্থান যারা দেখেছেন, তারা কেউ দ্বিমত পোষণ করবেন বলে মনে হয় না। মুঘল সম্রাট শাহজাহান কর্তৃক নির্মিত এই অনন্য স্মৃতিসৌধ সম্রাটের প্রিয়তমা স্ত্রী সম্রাজ্ঞী মমতাজ মহলের প্রতি ভালবাসার প্রতীক হয়ে জ্বলজ্বল করছে। শাহজাহান ও মমতাজ মহল-এর মধ্যে ভালবাসা এত গভীর ছিল যে, রাজকার্য থেকে শুরু করে সামরিক অভিযান পর্যন্ত মমতাজ ছিলেন তার স্বামীর অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী। 


সর্বশেষ সন্তান জন্মলাভের সময় ১৬৩০ সালে বোরহানপুরে মমতাজ মহলের মৃত্যু হয়। প্রিয়তমা স্ত্রীর ভালোবাসার স্মৃতিকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে যমুনা নদীর তীরে আগ্রায় ১৬৩১ সালে শাহজাহানের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে তাজমহলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০ হাজার লোকের ২২ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে ১৬৫৩ সালে তাজমহলের নির্মাণকাজ শেষ হয়। নির্মাণে খরচ হয়েছিল প্রায় ৩২ মিলিয়ন রুপি, যার বর্তমান মূল্য ৪০ লাখ পাউন্ড। 


দিল্লি, কান্দাহার, লাহোর এবং মুলতানের সুদক্ষ রাজমিস্ত্রি এবং বাগদাদ, শিরাজ এবং বোখারার অনেক দক্ষ মুসলিম নির্মাতা তাজের নির্মাণকাজে অংশ নিয়েছিলেন। নির্মাণকাজে ১০০০ এরও বেশি হাতি ব্যবহার করা হয়েছিল। তাজের প্রধান স্থপতি ছিলেন সেই সময়ের প্রখ্যাত মুসলিম স্থপতি ওস্তাদ ঈসা খাঁ। 


তাজমহলের ভেতরে ঢোকার পর কিছুদূর যেতেই এক প্রবেশপথের সামনে পায়ে বাঁধার জন্য সাদা ধবধবে নরম এক রকম কাপড় দেওয়া হয় জুতাসহ পায়ে পড়বার জন্য। হাঁটতে গিয়ে মহা মূল্যবান পাথর এবং কারুকার্য যেন পায়ের চাপে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, সেজন্য এ ব্যবস্থা। এ চমৎকার সমাধিসৌধ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়েছে। গেট পেরিয়ে তাজমহলের মূল সৌধের কাছে যেতে বেশকিছু পথ হাঁটতে হয়। নিচ থেকে ২১টি সিঁড়ি পার হয়ে তাজমহলের মূল বেদীতে প্রবেশ করতে হয়। শাহজাহানকে তার প্রিয়তমা স্ত্রী মমতাজ মহলের পাশেই সমাধিস্থ করা হয়। দুটি কবরই রয়েছে তাজমহলের যে গম্বুজ, ঠিক তার নিচে। 


কথিত আছে, পৃথিবীতে যাতে দ্বিতীয় কোন তাজমহল গড়ে না ওঠে সেজন্য সম্রাট শাহজাহান কারিগরদের হাতের আঙুল কেটে দিয়েছিলেন এবং তাদের অন্ধ করে দিয়েছিলেন। তীব্র ভালোবাসা মাঝে মানুষকে অন্ধও করে ফেলে! 


কখন যাবেনঃ তাজমহল বেড়াতে আগ্রা যাওয়ার উপযুক্ত সময় নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি। খুব গরমে আগ্রা না যাওয়াই ভালো। 


কীভাবে যাবেনঃ দিল্লী থেকে ট্রেনে ২১০ কিলোমিটার দূরে আগ্রায় যেতে দেড় ঘণ্টা লাগে। ঢাকা থেকে কলকাতা হয়ে রাজধানী এক্সপ্রেসে করে দিল্লী যাওয়া যায়। 


কোথায় থাকবেনঃ এখানে বিভিন্ন মানের এবং দামের হোটেল আছে। পছন্দমতো হোটেল বুক করে নিন। এখানে আগ্রার বিখ্যাত মোগলাই খাবার, বিরিয়ানি খেতে পারবেন। 


তবে আর দেরী কেন? চলে আসুন প্রেমের সৌধ তাজ দেখতে, মুগ্ধ বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে থাকা কিছু স্মৃতি জড়ো হোক আপনার সংগ্রহে!

Tuesday, March 16, 2021

মওদুদ আহমদ আর নেই

 বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)।

মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।


এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি হন মওদুদ। এরপর ১০ মার্চ সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেয়া হয়।


সে সময় মওদুদের একান্ত সহকারী মমিনুর রহমান সুজন বলেছিলেন, ‘স্যারের ফুসফুসে গত ১২ দিন ধরে পানি জমা হচ্ছে, যার কারণে ফুসফুসে অক্সিজেন গ্রহণক্ষমতা একেবারেই কমে গেছে। পাশাপাশি উনার কিডনি জটিলতাও দেখা দিয়েছে।’


ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক উপ-রাষ্ট্রপতি। তিনি বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ৪ দলীয় জোট সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন।

১৯৪০ সালের ২৪ মে নোয়াখালী জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন মওদুদ আহমদ। তার বাবা মাওলানা মমতাজ উদ্দিন আহমদ এবং মা বেগম আম্বিয়া খাতুন। ছয় ভাইবোনের মধ্যে চতুর্থ মওদুদ।


১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মিছিলে যোগ দিয়ে পুলিশি নির্যাতনের পর ঠাঁই মওদুদ আহমদের হয়েছিল কারাগারে। এই ঘটনা মনের অজান্তেই তাকে করে তোলে রাজনীতি সচেতন। ঢাকা কলেজ ছাত্রসংসদের আপ্যায়ন সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় অ্যাডভোকেট ফরমান উল্লাহ খান প্রতিষ্ঠিত খেলাফত রব্বানীর ছাত্র সংগঠন ছাত্রশক্তির নেতা ছিলেন।

পেশাজীবী হিসেবে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর আইনজীবী, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, মানবাধিকার আইনজীবী হিসেবে নানা ভূমিকায় নিজেকে রেখেছিলেন রাজনীতির কক্ষপথেই। বিএনপি আর জাতীয় পার্টি গঠনে পালন করেন মুখ্য ভূমিকা। কারাভোগ করেছেন পাকিস্তান আমল, বঙ্গবন্ধু, এরশাদ, ওয়ান ইলেভেন ও মহাজোট সরকারের আমলে।


শিক্ষাজীবনে মওদুদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মান পাস করে ব্রিটেনের লন্ডনের লিঙ্কন্স্ ইন থেকে অর্জন করেন বার-অ্যাট-ল। দেশে ফিরে হাইকোর্টে ওকালতির একপর্যায়ে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শামিল হয়েছিলেন আইনি লড়াইয়ে।


বঙ্গবন্ধুর পক্ষে আইনি লড়াই করতে খ্যাতনামা ব্রিটিশ আইনজীবী স্যার টমাস উইলিয়ামস কিউসিকে বাংলাদেশে আনতে রেখেছিলেন ভূমিকা। ১৯৭১-এ ইয়াহিয়া খান আহূত গোলটেবিল বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠকের ভূমিকা ছাড়াও ব্যারিস্টার মওদুদকে পোস্টমাস্টার জেনারেল নিয়োগ করে মুজিবনগর সরকার। স্বাধীন বাংলাদেশের শুরুর দিকেও তাকে কারাভোগ করতে হয়েছে